ভূমিকম্প : সাধারণ জ্ঞানে ভূমিকম্প শব্দটি দ্বারা যে কোন প্রকার ভূকম্পন জনিত ঘটনাকে বোঝায় - সেটা প্রাকৃতিক অথবা মনুষ্য সৃষ্ট যাই হোক না কেন। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের কারণ হল ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া কিন্তু সেটা অন্যান্য কারণ যেমন অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনিতে বিষ্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থ নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা থেকেও হতে পারে। ভূমিকম্পের প্রাথমিক ফাটলকে বলে ফোকাস বা হাইপোসেন্টার। এপিসেন্টার হল হাইপোসেন্টার বরাবর মাটির উপরিস্থ জায়গা।
ভূমিকম্প সম্পর্কে বিস্তারিত তত্ত্ব
★ ভূমিকম্পের কারণ ও পরিণতি
ক) অশ্মমন্ডল
ভূমিকম্প, ভূতাত্ত্বিকগণ পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল থেকে পৃথিবীর অভ্যন্তরটিকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছেন। এগুলি হ'ল কেন্দ্রমন্ডল , গুরুমন্ডল এবং অশ্মমন্ড। শীর্ষে নিরক্ষীয় স্থান। এই স্তরের অপর নাম শিলা মন্ডল।
★ ভূমিকম্প
ভূত্বক বিভিন্ন কারণে কেপে ওঠে । এই কম্পন তরঙ্গ তৈরি করে। পৃথিবী এক মুহুর্তের জন্য কাঁপলে এই তরঙ্গের প্রভাবটিকে ভূমিকম্প বলা হয়।
খ) কেন্দ্রস্থল এবং উপকেন্দ্র
পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি তাকে কেন্দ্রস্থল বলা হয় এবং এই কেন্দ্র থেকে লম্বালম্বিভাবে শীর্ষে পৃথিবীর উপরের স্তরটিকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রস্থল বলা হয়।
★ সিসমোগ্রাফ মেশিন বা সিসমোগ্রাফ এবং রিখটার স্কেল
যে উপকরণের সাহায্যে ভূমিকম্পের তরঙ্গের গতিবিধির লেখচিত্র পাওয়া যায় তাকে ভূমিকম্পলিখ যন্ত্র বলে । এই লেখচি সাহায্যে ভূমিকম্পের উৎস, তীব্রতা এবং সময় জানা যায় । রিখটার স্কেলটি সিসমোগ্রাফ ডিভাইসের সাথে লাগানো থাকে । এটি আমেরিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, অধ্যাপক রিখটার আবিস্কার করেন।
★ ভূমিকম্পের কারণসমূহ
ভূ-তাত্ত্বিকরা ভূমিকম্পের কারণগুলি দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা -
1) প্রাকৃতিক কারণ।
2) মানবসৃষ্ট কারণ।
★ প্রাকৃতিক কারণ -
ক) চ্যুতির ফলে - ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠেে কোনো ফাটল বা চ্যুতির সৃষ্টি হলে চ্যুতিতলে ঘর্ষনের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়।
খ) নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল - নবীন পার্বত্য অঞ্চলে গঠনকার্য এখোনো চলছে। ফলে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়।
গ) ধস - পার্বত্য অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে, চুনাপাথর অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ চুনাপাথরের গুহার ছাদ ধসে পড়লে ভূমিকম্প হয়।
★ মানবসৃষ্ট কারণ
ক) বিশাল জলধারা তৈরি করলে জলধারের পাশ্ববর্তী শিলাস্তর জলের প্রচন্ড চাপ সহ্য করতে না পারলে ভুমিকম্প হ।।
খ) পার্বত্য অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণের সময় ডিনামাইট ফাটালে ভূমিকম্প হয়।
গ) বহুতল বাড়ি তৈরি করার সময়।
ঙ) কৃত্রিম উপগ্রহ ছাড়ার সময়।
★ ভূমিকম্প বলয়
পৃথিবীতে দুটি ভূমিকম্প বলয় রয়েছে -
1) একটি বলয় প্রশান্ত মহাসাগরকে বেষ্টিন করে আছে। এটি পশ্চিমে আন্দিজ এবং রকি পর্বতমালা এবং পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর, জাপান, ফিলিপাইন জুড়ে রয়েছে।
2) অন্য রিংটি আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝামাঝি থেকে আল্পস, ককেশাস, ইরান, আফগানিস্তান, হিমালয়, উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল এবং পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সাথে এসে মিলিত হয়। এই বলয়টি ভূমধ্য পার্বত্য বলয় হিসাবে পরিচিত। একে টেথিয়ান বলয় বলে।
★ পৃথিবীর ভূমিকম্প প্রবন অঞ্চলগুলি হল -
1) নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল,
2) খাড়া উপকূল ভাগ,
3) আগ্নেয়গিরির অধ্যুষিত অঞ্চল,
4) দুটি পাতের সীমানা অঞ্চ,
৫) জাপান পৃথিবীর বৃহত্তম ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল,
★ ভূমিকম্পের ফলাফল
ভূমিকম্পের ফলে পৃষ্ঠতলের উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন হয় -
1) তীব্র ভূমিকম্পের ফলে ঘরগুলি ধ্বংস হয়। গাছপালা উপড়ে ফেলা হয় এবং অনেক প্রাণীর ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
২) ভূমিকম্প যখন তীব্র হয় বা কেন্দ্রস্থল সমুদ্রের তলদেশে থাকে তখন সমুদ্রের জল উচ্চ হয়ে যায় এবং উচ্চ গতিতে প্রবাহিত হয় নিকটস্থ ভূমিতে এবং ভারী বন্যা হয়। একে সুনামি বলা হয়।
3) ভূমিকম্পের ফলে ফাটল বা চ্যুতির সৃষ্টি হয়।
4) ভূমিকম্প নদীর গতি পরিবর্তন করে।
★ ভূমিকম্পী তরঙ্গ এবং ধারাবাহিক তরঙ্গ -
ভূমিকম্পের তরঙ্গ - পুকুরের কোনো জায়গায় ঢিল ছোঁড়ায় ঢিলটি যেখানে পড়ল সেখান থেকে চারিদিকে ঢেউগুলো যেমন ছড়িয়ে পড়ে ভূমিকম্প তরঙ্গ টিক তেমন ভাবে ছড়িয়ে পড়ে একে ভূমিকম্প তরঙ্গ বলা হয়।
★ ভূমিকম্পের তরঙ্গ সাধারণত তিন ধরণের হয়। যথা -
1) প্রাথমিক তরঙ্গ
2) দ্বিতীয় তরঙ্গ
3) পৃষ্ঠ তরঙ্গ।
★ প্রাথমিক তরঙ্গ- এই তরঙ্গ ভূখণ্ডের সংকোচনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। দ্রুতগামী তরঙ্গ সর্বপ্রথম উপকেন্দ্র এসে পৌঁছায়।
★ দ্বিতীয় তরঙ্গ - প্রধান ধাক্কায় ভূস্তরের এক পাশ থেকে অন্য পাশে এসে প্রবাহিত এই তরঙ্গ , প্রথম তরঙ্গের পরে এই তরঙ্গটি উপকেন্দ্রে পৌঁছে।
★ পৃষ্ঠ তরঙ্গ- উপকেন্দ্র থেকে অপর একটি তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠেের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, একে পৃষ্ঠতরঙ্গ বলে।
★★ভারতের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প -
★★ উপরের আলোচনা থেকে আপনারা ভূমিকম্প সম্পর্কে বিস্তারিত তত্ত্ব জানতে পারলেন। আমরা আশাকরি এই প্রতিবেদন থেকে আপনারা ভূমিকম্প সম্পরর্কে অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।
0 মন্তব্যসমূহ