প্রিয় পাঠক আজ আমরা আপনাদের সম্মোখে ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত তত্ত্ব আলোচনা করবো সুতরাং আপনি আজকের এই প্রতিবেদন থেকে ভাইরাস কি, ভাইরাসের সঙ্গা,বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ভাইরাস সম্পর্কিত বিস্তারিত তত্ত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো
★ ভূমিকা :
ভাইরাস, অনুজীব এবং মানুষের রোগ পারস্পরিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত। মানুষের দেহের সকল রোগের একমাত্র কারণ হচ্ছে বিভিন্ন ভাইরাস ও অনুজীব। মানব জীবনে ভাইরাস সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন।
ভাইরাস হচ্ছে একটি ল্যাটিন শব্দ যার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে বিষ। 1796 সালে প্রথম বসন্ত রোগের কারণ হিসাবে বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার ভাইরাসের কথা উল্লেখ করেন এবং 1898 সালে বিজ্ঞানী Beijerink প্রথম ভাইরাসের নামকরণ করেন। 1936 সালে বিজ্ঞানী বডেন ও পিরি প্রমাণ করেন যে ভাইরাসের দেহ নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত।
ভাইরাস এত সূক্ষ্ম হওয়ার কারণে কেবলমাত্র ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেই দৃশ্যমান। রোগ সৃষ্টিকারী এক-একটি ভাইরাসকে ভিরিয়ন বলে।
ভাইরাল প্রজাতির মধ্যে প্রচুর জিনোমিক কাঠামো দেখা যায়; একটি গোষ্ঠী হিসাবে এগুলিতে উদ্ভিদ, প্রাণী, আর্চিয়া বা ব্যাকটিরিয়ার চেয়ে স্ট্রাকচারাল জিনোমিক বৈচিত্র রয়েছে। লক্ষ লক্ষ বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস রয়েছে, যদিও কেবলমাত্র প্রায় 6,000 প্রকারের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
★ ভাইরাসের সংজ্ঞা :
নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত, অতিসূক্ষ্ম রোগ সৃষ্টিকারী অকোশীয় বস্তুু জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ে অবস্থিত এবং পোষাক কোশের অভ্যন্তরে বংশবিস্তারে সক্ষম ও কেবলমাত্র ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যমান, তাদের ভাইরাস বলে।
★ অবস্থান :
উদ্ভিদ, প্রাণী, ব্যাকটেরিয়া , সায়ানোব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি জীবদেহের সজীব কোষে ভাইরাস সক্রিয় ভাবে অবস্থান করে। অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বাতাস, মাটি, পানি ইত্যাদি প্রায় সকল জড় মাধ্যমে ভাইরাস অবস্থান করতেপারে। সুতরাং বলা যায় যে জীব ও জড় পরিবেশ উভয়ই ভাইরাসের আবাস।
★ আয়তন :
ভাইরাস সাধারণত ব্যাকটেরিয়া থেকেও ক্ষুদ্র হয়। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এদের দেখা সম্ভব হয়না। সাধারণত এদের আকার 10 nm থেকে 300 nm পর্যন্ত হয়ে থাকে।তবে কিছু কিছু ভাইরাস এর থেকেও বড় হয়।
★ আকার-আকৃতি :
ভাইরাস সাধারণত নিম্ন লিখিত আকৃতির হয়। গোলাকার, দণ্ডাকার, বর্তুলাকার, সূত্রাকার, পাউরুটি আকার, বহুভুজাক্রিতি, ব্যাঙ্গাচি আকার প্রভৃতি।
★ ভাইরাসে এর বৈশিষ্ট্য :
1) ভাইরাস একধরনের অতিক্ষুদ্র বস্তুু, যা খালি চোখে দেখা যায় না।
2) ভাইরাস হচ্ছে জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ে অবস্থিত রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু।
3) ভাইরাসের দেহে কোন প্রোটোপ্লাজম ও কোশপর্দা থাকে না এ জন্য ভাইরাস হচ্ছে অকোশীয়।
4) ভাইরাসের দেহ নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA বা RNA) এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত।
5) ভাইরাস বাধ্যতামূলক ভাবে পরজীবি ও রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু।
★ ভাইরাসের সজীব বৈশিষ্ট্য :
1) সজীব বস্তুর ন্যায় ভাইরাসের দেহ নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত।
2) ভাইরাস হচ্ছে পূর্ণ পরজীবি এবং সংক্রামক।
3) ভাইরাস প্রকরনে এবং মিউটেশনে সক্ষম।
4) ভাইরাস অম্ল, ক্ষার ও জারনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিরোধ করে।
★ ভাইরাসের জড় বৈশিষ্ট্য :
1) ভাইরাসের দেহে কোনো প্রোটোপ্লাজম এবং কোশপর্দা নেই।
2) চিনি, লবন ইত্যাদির ন্যায় ভাইরাসকে কেলাসিত করা যায়।
3) ভাইরাসের দেহে কোনো বিপাকীয় কার্য গঠেনা।
★ ভাইরাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য :
1) ভাইরাস হচ্ছে একপ্রকার অকোশীয় পরজীবি বস্তুু।
2) ভাইরাসের দেহে জীব ও জড়ের বৈশিষ্ট্য বর্তমান।
3) ভাইরাসের নিউক্লিয় অ্যাসিড কেবলমাত্র DNA / RNA
4) DNA/RNA থেকেই ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে।
★ ভাইরাসের বিভিন্ন আকৃতি :
1) মাম্পস ভাইরাস
2) ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
3) হারপিস ভাইরাস
4) লিউকোমিয়া ভাইরাস
5) এডিনো ভাইরাস
6) ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাস
7) পোলিও ভাইরাস
8) TMV ভাইরাস
9) ব্যাকটেরিও ফাজ
10) COVID-19 ইত্যাদি।
এছাড়াও অসংখ্য ভাইরাস রয়েছ।
★ ভাইরাস জনিত রোগ :
ক) মানুষের রোগ
১) বসন্ত (Pox)-ভেরিওলা
১) জলাতঙ্ক
৩) জন্ডিস
৪) ডেঙ্গু
৫) হাম-রুবিওলা
৬) ভাইরাল ডায়ারিয়া
৭) সাধারণ ঠান্ডা
৮) এইডস(AIDS)
৯) ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
১০) সার্স(SARS)
১১) ভাইরাল হেপাটাইটিস
১২) কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস ১৯)
১৩) কয়েক প্রকার ক্যান্সার :
ক) সার্ভিকাল ক্যান্সার
খ) কাপোসি সারকোমা
★ পশু-পাখির রোগ :
১) বার্ড-ফ্লু
২) ক্যানাইন ডিস্টেম্পার (Canine distemper)
৩) ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিসিজ (Foot-and-mouth disease)
★ উদ্ভিদের রোগ :
১) টোব্যাকো মোজেইক ভাইরাস {Tobacco mosaic virus } বা টিএমভি ( TMV )
0 মন্তব্যসমূহ